সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ: 
আজ ঐতিহাসিক ৭মার্চ। ১৯৭১সালে এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাষণে পূর্ব বাংলার নীপিড়িত মানুষের মুক্তির বানী ঘোষনা করেছিলেন। 'এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই মহান উচ্চারণের মধেই ঘোষিত হয়ে গিয়োছিল জাতির মুক্তির পথ। ঐতিহাসিক ৭মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অতুলনীয়। এটি কোনো সাধারণ বক্তৃতা ছিল না। এটি ছিল স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বেলিত একজন অবিসংবাদিত নেতার হৃদয় নিংড়ানো অভিব্যক্তি। এটি একটি অমর কবিতা। কিন্তু ৭র্মার্চের ঐতিহাসিক মহা সমাবেশে কার সভাপতিত্বে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের সমাবেশ উদ্ধোধন করা হয়েছিল শুধুমাত্র কুরআন তেলাওয়াত করে। ভাষনের শেষে মোনাজাত করা হয়েছিল এবং কে করেছিলেন তা ইতিহাসে চাপা পরে আছে।কেন কার অবহেলায় কোন অপরাধে। এসব কি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অংশ নয়। এর সাথে কি ৭১'র মুক্তিসংগ্রাম এর যোগসূত্র নেই? এর সাথে কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পর্ক নেই।
আমি নিচে কয়েকটি ঐতিহাসিক ছবির দলিল আপনাদের সামনে পেশ করছি। ছবিতে আপনারা ৭মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের সময় মঞ্চে কয়েকজন মাওলানাকে দেখতে পাবেন। তাদেরই একজন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কাবাগিশ। যার প্রভাবের কারনেই বঙ্গবন্ধুরর ভাষণের চেতনা জুড়ে ছিল ইসলামি স্পীডের ঢেউ। বার বার ইনশাআল্লাহ বলে তিনি জাতিকে আল্লাহর উপর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাসের মূল মন্ত্রে দেশপ্রেমের ঈমানী চেতনায় উজ্জেবিত হয়ে বাঙ্গালিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন।
৭মার্চের ভাষণ শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর মাওলানা উবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদিরর কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে। নিচে মাওলানা উবায়দুল্লাহর সাথে বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি নিচে দেয়া আছে। ৭মার্চের সমাবেশে ভাষন শেষ করে মাওলানা তর্কবাগীশ এর মোনাজাতে সমাপ্ত হয়। মুনাজাতের সেই ঐতিহাসিক ছবি নিচে দেয়া হল। আমাদের মুক্তি সংগ্রামের মূল মন্ত্র ৭মার্চ ভাষন যদি একজন মাওলানার সভাপতিত্বে হয়ে থাকে। ৭মার্চের ভাষনের পূবে যদি একমাত্র কুরআনে কারিম তেলাওয়াত করে এক মাওলানা এর উদ্বোধন করে থাকেন। ৭মার্চের ভাষণে যদি বঙ্গবন্ধু বারবার ইনশাআল্লাহর চেতনায় উজ্জেবিত হয়ে থাকেন। ৭মার্চের ভাষণের পর যদি আল্লাহ তায়ালার সাহায্য চেয়ে মজলুম বাঙ্গালিদের জন্য জালেমের বিরোদ্ধে সাহায্যের দোয়া করে সভা শেষ হয়ে থাকে তাহলে আমার বুঝে আসে না মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিভাবে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হয়ে গেল পরবর্তিতে!
============================
একাত্তরে কোথায় নেই আলেমরা। মুক্তিযুদ্ধের পরতে পরতে তারা ছড়িয়ে আছেন , জড়িয়ে আছেন , ছিটিয়ে ছিলেন বাংলার আনাচে কানাচে । কে যেন বলেছিলেন , মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচনা করতে একশত বছর সময় লাগবে । এটাই ঠিক ।একাত্তরে আলেমদের চেপে রাখা ইতিহাসের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে চির সত্য অনেক অজানা কাহিনী।বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭মার্চ ভাষন । যা শোনে বীর বাঙ্গালি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জেবিত হয়েছিল । যে সমাবেশ একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের ভিত রচনা করেছিল ।
                  

সেই ৭মার্চ রেসর্কোস ময়দানে সমাবেশ উদ্ভোধন হল কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে । উদ্ভোধন করলেন বঙ্গবন্ধুরই সহচর এক মাওলানা । সেই ইতিহাস আজ অনেকের ই অজানা ।পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করে এই ঐতিহাসিক গন সমাবেশের যাত্রা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের জিবন্ত কিংবদন্তি মাওলানা উবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী। ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার দুই অগ্রদূত। উভয়ের একান্ত নিকটা সান্নিধ্য পেয়েছিলেন এই মাওলানা জালালাবাদী। সারাদেশ তখন ৬দফাকে কেন্দ্র করে উত্তাল । এমনএক মুহুর্তে বঙ্গবন্ধু সিলেট এলেন । এই প্রথম পরিচয়। তার পর এই মাওলানা শেখ সাহেবের একান্ত সহচার্য পেয়েছেন দীর্ঘ সময় ।একাত্তরের কখনো তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক আবার কখনো মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল আতাউলগণি ওসমানীর সহযোদ্ধা হিসাবে একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামে তিনি ঐতিহাসিক ভুমিকা পালন করেছেন ।শুধু তিনি নন তারা দুই ভাই একত্রে জাপিয়ে পড়েছিলেন একাত্তরের যুদ্ধে । তার বড়ো ভাই মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী একাত্তরে অস্ত্র হাতে হানাদারদের বিরোদ্ধে লড়াই করেছেন ।৬দফা ঘোষনার পর ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িতে বসে বঙ্গবন্ধু মাওলানা উবায়দুল্লাহ জালালাবাদীকে বললেন , আমার ৬দফাতে ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু আছে কিনা। জালালাবাদীর মুখ থেকে এর সমর্থনে ব্যখ্যা শোনে খুশি হলেন । এর পর বঙ্গবন্ধু তাকে আওমী ওলামা পাটি গঠনের নির্দেশ দেন । পরে এই জালালাবাদী ও মাওলানা ওলিউর রহমান , শরীয়তের দৃষ্টিতে ৬দফা কর্মসুচি নামে পুস্তিকা লিখে হাজার হাজার কপি বিলি করে ধর্মপ্রিয় জনতার হাতে পৌছে দেন। (আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে পৃঃ ১৪৭)২৫মার্চ ১৯৭১।
৫১নং পুরানা পল্টন আওমী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসে একের পর এক ফোন আসছে । সব কেন্দ্রীয় নেতারা তখন অফিসছেড়ে পালিয়েছেন। হানাদারদের হামলা শুরু হয়েছে ঢাকা শহরে ।আর এই মুহুর্তে আওমী লীগ অফিসে বসে ফোন রিসিভ করছেন এক মাওলানা । বিভিন্ন স্হান থেকে মানুষ ফোন করে জানতে চাচ্ছিল এই মুহুর্তে করণীয় কী ? আর এই মাওলান টেলিফোনের এপাশ থেকে বলছিলেন ঝাপিয়ে পড়ুন শত্রুর বিরোদ্ধ। এটা জালেমের বিরোদ্ধে মজলুমের জেহাদ । হাঠাৎ লাইন বিচ্ছিন্ন ।তিনি বেরিয়ে পড়লেন অন্ধাকারে যুদ্ধের ময়দানে।অনেক পথ পাড়ি দিয়ে প্রথম ভারতের আগরতলায় । অতঃপর কলতাকাতায় । সেখানে তাজউদ্দিন আহমদের বাড়িতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র । ৫৭/৮ বালিগন্জ সার্কুলার রোডে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিচলনায় নিয়োজিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এই মাওলানা অসামান্য অবদান রাখেন ।১৩ ডিসেম্বর কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডস্হ মুক্তিযোদ্ধের সদর দপ্তরে কর্নেল ওসমানীর সাথে দেখা করতে গেলেন । সেখান থেকে মুক্তিফৌজের সর্বাধিনায়ক কর্নেল আতাউল গনী উসমানী থাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন রানাঙ্গনে । সাথে ছিলেন শেখ কামাল।
ওসমানী তখন তার হাতে এই সময় একটি জিনিস ধরিয়ে দিলেন । বললেন এটা মহামুল্যবান বস্তু । আপনার সাথে রাখুন । এটা ছিল পবিত্র কোরআন শরীফ । যা কর্নেল ওসমানী সর্বদা সাথে রাখতেন একাত্তরের দিন গুলোতে । কবি রাগিব হুসেন চৌধুরী তার লেখা 'শতাব্দির দুই মনীষা' গ্রন্হ লিখেছেন , কর্নেল উসমানী কোরআন তেলাওয়াত না করে কোন কাজ করতেন না । এই কোরআনছিল তার নিত্য সঙ্গি । ঘরে অথবা অফিসে কিংবা সফরে সর্বত্র তিনি সাথে রাখতেন । এমন কি একাত্তরের অগ্নিঝরা যুদ্ধের দিনগুলোতেও '।আর আজ যখন শোনতে হয় একাত্তরের চেতনা ছিল ধর্মনিরপক্ষতা । স্যকুলার রাষ্ট প্রতিষ্টা । তখন ইতিহাস বিকৃতি দেখে চমকে উঠি । এটা ইতিহাসের সাথে কতো বড়ো অবিচার ।কর্নেল উসমানী মাওলানা জালালাবাদীকে সাথে নিয়ে হেলিকাপ্টার করে বাংলাদেশের একজায়গা থেকে অন্য জায়গাতে যুদ্ধ পরিচালনা করতে লাগলেন । উসমানী তখন এই মাওলানা জালালাবাদীর পরার্মশকে খুব গুরুত্ব দিতেন। তাদের সর্বাত্বক পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব আর বাংলার দামাল ছেলেদের জানবাজি লড়াইয়ে পিছু হটল হানাদার বাহিনী । ১৬ ডিসেম্বর বাংলার আকাশে উদিত হলো রক্তেলাল বিজয়ের সূর্য ।
=========================
             


৭ই মার্চ ১৯৭১ অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ।হাজার হাজার বছরের পরাধীন বাঙ্গালী জাতির মুক্তির মঞ্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দিলেন "এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম" ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ১৯৭১সালের জনসভার সভাপতিত্ব করেন
মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী প্রবাদ পুরুষ মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ। সেই ইতিহাসটি আজ তেমন একটি বলা হচ্ছে না।
মাওলান তর্কবাগীশ এর নাতি Syed Hadi Tarkabagish একুশের সংকলনে ‘অগ্নিগর্ভে একুশ’ #প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেদিন প্রথম তর্কবাগীশের সাথে দেখা হয় সেদিন বলেছিলেন, "নেতা আমি আপনার মতো বক্তা হতে চাই।’'
হ্যা, একদিন তিনি এমন এক বক্তৃতা দিলেন, তর্কবাগীশের বক্তৃতা হার মানাল।
তিনি #বঙ্গবন্ধুতে পররিণত হলেন। তার সেই বক্তৃতা তাকে তর্কবাগীশ হবার স্বপ্ন কেবল নয় তার চেয়ে অনেক উঁচুতে পৌঁছে দিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চে ১১৯৭১ এর সেই বক্তৃতায় উদ্বেলিত করলেন পুরো জাতিকে। সেই ৭ মার্চের অমর ভাষণ পৃথিবীর সেরা বক্তৃতার একটা। এটি শুধু কোন বক্তৃতা নয়। এক অমর কবিতা। এক অমর কালজয়ী ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চ ভাষণের পেছনে এই একজন মাওলানা তর্কবাগিশ এর কি অবদান ছিল তা আজো ইতিহাসে দেদীপ্যমান। বঙ্গবন্ধু ভাষণ শেষ করে মাওলানা তর্কাবাগিকে দিয়েই মোনাজাত করালেন। আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও ৭মার্চের সেই ইতিহাসটি অনেকেই জানেন না। এপ্রজন্মকে সে ইতিহাস জানানো সময়ের দাবি। বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণের সূরে বলব, আমাদের দাবায়া রাখতে পারবেন না ইনশাল্লাহ।

সৌজন্যে, আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরাম